বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ১২:৪৬ পূর্বাহ্ন

খিঁচুনির ওষুধ সেবন কতদিন

খিঁচুনির ওষুধ সেবন কতদিন

স্বদেশ ডেস্ক:

গত সপ্তাহে হাসপাতালে ডিউটি করছি। এমন সময় এক কিশোরী খিঁচুনিরত অবস্থায় ভর্তি করা হয়। কিছুতেই ওর খিঁচুনি থামছিল না। আধা ঘণ্টার ওপরে খিঁচুনি হচ্ছে। মেয়েটিকে শিরাপথে ইনজেকশন দেয়া হলো। কিন্তু খিঁচুনি থামছিল না।

ভাবছিলাম কী করব? আর একবার একই ইনজেকশনে যদি না থামে তাহলে আইসিইউতে ভর্তি করা ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। রোগীর আত্মীয়স্বজনকে সেভাবেই বুঝালাম। ১৫ মিনিট পর আবার সে ইনজেকশনটি পুশ করা হয়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন মেয়েটির খিঁচুনি মিনিট দু-একের মধ্যে থেমে গেল। হিস্ট্রি নিয়ে জানলাম, মেয়েটি গত পাঁচ বছর ধরে খিঁচুনির ওষুধ সেবন করে। গত দুই বছর ধরে তার কোনো খিঁচুনি হয়নি। তার বাবা তাই ১০-১৫ দিন হলো ওষুধ সেবন বন্ধ করে দিয়েছেন। মেয়ে পুরোপুরি সুস্থ হয়েছে কি না তা জানার জন্য। কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ নেননি তিনি। মনে মনে তার প্রতি কিছুটা রাগ হলো। কিন্তু মেয়ের অবস্থা দেখে বেচারা এতটাই ভেঙে পড়েছেন যে, কিছু বলতে পারলাম না। শুধু বললাম ভবিষ্যতে মেয়ের জীবন নিয়ে খেলবেন না।

খিঁচুনির বা এপিলেপ্সি একটি মারাত্মক রোগ। পরিবারে কেউ এ রোগে আক্রান্ত হলেই বোঝা যায় এর ভয়াবহতা। খিঁচুনি ওষুধ সেবনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। কত দিন ওষুধ খেতে হবে তা জানেন না কেউ। এ জন্য বিরক্ত হয়ে অনেকে ওষুধ সেবন ছেড়ে দেন। সেবন বন্ধ করে দেখেন রোগ সেরে গেছে কি না। দু’টিই কিন্তু ক্ষতিকর।

এপিলেপ্সিকে আলোচনার সুবিধার্থে দু’টি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। প্রাইমারি এপিলেপ্সি ও সেকেন্ডারি এপিলেপ্সি। চিকিৎসা ও লক্ষণগত পার্থক্যের কারণে এ বিভাজন।

প্রাইমারি এপিলেপ্সির কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। সাধারণত ৫ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে এটি দেখা দেয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ৩০ বছরের মধ্যে। পরিবারে অন্য কারো এ রোগের ইতিহাস থাকতে পারে। এ খিঁচুনি শুরু হয় পুরো শরীরজুড়ে। খিঁচুনির সময় মাথা সাধারণত মাঝামাঝি থাকে। সেকেন্ডারি এপিলেপ্সি সাধারণত পাঁচ বছরের কম ও ৫০ বছরের বেশি বয়সে হয়ে থাকে। সাধারণত মস্তিষ্কের টিউমার, স্ট্রোক, মাথায় আঘাতের পর এটি দেখা দেয়। শিশুর জন্মের সময় মাথায় আঘাত পেলে বা দেরিতে কান্না থেকেও হতে পারে এটি। এ খিঁচুনি শুরু হয় শরীরের কোনো অঙ্গ বা এক পাশ থেকে। মাথা যেকোনো একদিকে কাত করা থাকে। আক্রান্তরা খিঁচুনি শুরুর আগে বুঝতে পারেন খিঁচুনি হতে যাচ্ছে।

দু’টির চিকিৎসাও ভিন্ন। চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখবেন আপনি কোন ধরনের এপিলেপ্সিতে আক্রান্ত। প্রাইমারি এপিলেপ্সি চিকিৎসায় সাধারণত ভালো হয়। চিকিৎসক যদি মনে করেন আপনি প্রাইমারি এপিলেপ্সিতে আক্রান্ত তাহলে সোডিয়াম ভ্যালপ্রোয়েট, লিমোট্রিজিন, ফেনিটয়িন বা ফেরিবারবিটন জাতীয় ওষুধ সেবন করতে দেবেন। এ ওষুধগুলো স্বল্পমাত্রায় শুরু করে ধীরে ধীরে মাত্রা বাড়াতে হয়। তাই চিকিৎসক ঘন ঘন পরিবর্তন করবেন না। মনে রাখবেন এটি এমন ধরনের অসুখ যা কোনো চিকিৎসকই জাদু করে সারাতে পারবেন না। তাবে ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। চিকিৎসক ওষুধের মাত্রা ঠিক করে দেয়ার পর নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে থাকেন। অনেকে আছেন কোনো চিকিৎসককে দেখানোর পর যদি খিঁচুনি হয় তাহলে আবার চিকিৎসক পরিবর্তন করেন। এটি ভুল। কারণ ওষুধ যদি শুরুতেই বেশি মাত্রায় দেয়া হয় তাহলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই ধীরে ধীরে ওষুধ বাড়ানোই শ্রেয়। ধৈর্য ধরে আপনার চিকিৎসকের সাথে থাকুন। অনেক সময় এক ওষুধে কাজ না করলে অন্য প্রকারের ওষুধ যোগ করতে হয়। আপনি নিয়মিত চিকিৎসক বদলাতে থাকলে কিন্তু তা সম্ভব হবে না।

প্রাইমারিতে সাধারণত এক ধরনের ওষুধ দিয়েই খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ডোজও কম লাগে। প্রাইমারি খিঁচুনির সুবিধা হলো- যদি অনেক দিন ধরে খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণে থাকে তাহলে আস্তে আস্তে ওষুধ কমানো যায় এবং একসময় ওষুধ বন্ধও করা যায়। সাধারণত পাঁচ থেকে সাত বছর সময় লাগতে পারে। কিন্তু নিজে থেকে ওষুধ বন্ধ করবেন না। হঠাৎ ওষুধ বন্ধ করলে জীবনাশের কারণ হতে পারে। ওষুধ বন্ধ করার পর খিঁচুনি হলে আবার ওষুধ শুরু করতে হবে।

সেকেন্ডারি এপিলেপ্সিতে ওষুধ কিন্তু আজীবন সেবন করতে হবে। কোন কারণে খিঁচুনি হচ্ছে তার চিকিৎসা করতে হবে। যদি টিউমারের জন্য হয় তাহলে অপারেশন করতে হবে। মনে রাখবেন, আপনি যদি সেকেন্ডারি এপিলেপ্সিতে আক্রান্ত বলে চিহ্নিত হন তাহলে যতদিন বেঁচে থাকবেন ওষুধ সেবন করে যাবেন। ওষুধ সেবন নিয়ে হতশায় ভুগবেন না। ডায়াবেটিস, উচ্চ-রক্তচাপে আক্রান্তরা তো আজীবনই ওসুধ সেবন করে যান।

নিজে থেকে খিঁচুনির ওষুধ বাড়াবেন না বা কমাবেন না। বন্ধ বা চালু করবেন না। পুরো দায়িত্ব দিন আপনার চিকিৎসকের হাতে।

নিউরোলজিস্ট, ল্যাবএইড, গুলশান

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877